রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের উপর ক্রমবর্ধমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনাগুলো উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বন্দিদের মৃত্যুদণ্ডের উদাহরণ
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনীয় স্নাইপার ওলেক্সান্ডার মাতসিয়েভস্কি রুশ সেনাদের হাতে বন্দি হওয়ার পর তার জীবনের শেষ সিগারেট খাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অক্টোবরে রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে আটক নয়জন ইউক্রেনীয় সৈন্যকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। একটি ছবিতে দেখা গেছে ড্রোন অপারেটর রুসলান হোলুবেনকোর মৃতদেহ মাটিতে পড়ে আছে। তার পরিচয় তার বাবা-মা নিশ্চিত করেছেন।
শিরচ্ছেদ ও গণহত্যার ঘটনা
রুশ বাহিনীর হাতে বন্দি থাকা এক ইউক্রেনীয় সেনাকে তরবারি দিয়ে শিরচ্ছেদ করার একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। অন্য একটি ভিডিওতে ১৬ জন ইউক্রেনীয় সৈন্যকে সারিবদ্ধভাবে ব্রাশফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করতে দেখা গেছে।
আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন
তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধবন্দিদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু রুশ বাহিনী এই আইন লঙ্ঘন করে যুদ্ধবন্দিদের উপর নিষ্ঠুর আচরণ ও হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত।
পরিসংখ্যান ও পরিস্থিতি
ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ১৪৭ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২৭টি ঘটনা ২০২৪ সালের মধ্যেই ঘটেছে।
দায়মুক্তি ও জবাবদিহিতা
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি ডিরেক্টর রাচেল ডেনবার বলেন, রুশ সেনাদের এই কর্মকাণ্ডের পেছনে দায়মুক্তির মনোভাব কাজ করছে। তিনি রুশ সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড ও কমান্ডারদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা তদন্ত করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, রুশ সেনারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই যুদ্ধবন্দিদের সাথে আচরণ করে।
ইউক্রেনের ভূমিকা
ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও রুশ যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অভিযোগ উঠেছে, তবে এর সংখ্যা অনেক কম। ইউক্রেনীয় প্রসিকিউশন সার্ভিস এই অভিযোগগুলো গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে।
এই ধরনের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হচ্ছে।