Is Yours Voice
Website Sale

সিলেটে হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি

টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে চলমান দ্বিতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ঈদের দিন (সোমবার- ১৭ জুন) দুটি নদীর পানি ২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে থাকলেও মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে ৪টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রবিবার (১৬ জুন) রাত পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সিলেট জেলায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী থাকার তথ্য দিলেও স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে- আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দুই লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত। এর মধ্যে মহানগরের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী। বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঈদের দিন কুরবানির পশুর মাংস, শুকনো খাবার, সেলাইন ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার (১৫ জুন) ফের কবলিত সিলেট।

রবিবার (১৬ জুন) রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ পানিবন্দী। তবে সোমবার (ঈদের দিন) ভোররাত থেকে সিলেটে ঝরতে শুরু করে ভারী বৃষ্টি। সঙ্গে নামতে থাকে উজানের ঢল। ফলে সোমবার সকালের মধ্যেই প্রায় সকল উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকা হয় প্লাবিত। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়ে যায় পানিতে।

ঈদের দিন দুপুরের পর বৃষ্টি থামলে নামতে শুরু করে মহানগরের পানি। তবে মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় সিলেটে বৃষ্টিপাত। ফলে আজ সকাল থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে সিলেট মহানগরের পানি। অনেক এলাকার বাসিন্দা জানিয়েছেন- গতকাল থেকে আজ পরিস্থিতি আরও খারাপ। ডুবেছে নতুন নতুন সড়ক ও বাসাবাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগরের সব নিচু এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত। এছাড়া মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি রয়েছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান পানির নিচে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জানায়, এ সময় পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা থেকে ১৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার এবং নদীর সারিগোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার গ্রামীণ অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং মঙ্গলবার সকল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মি.মি বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দুইদিন সিলেটে টানা বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।

আর ইন্ডিয়া মেট্রলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে- ভারতের চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার ৬টা পর্যন্ত ৩৯৫ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে দ্রুত বাড়ছে সিলেটের নদ-নদীর পানি।

সিলেট জেলা প্রশাসন ঈদের দিন রাতে জানিয়েছে, সব উপজেলায় মোট ৫৩৮টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৪৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, ঈদের দিন বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কুরবানিদাতারা পড়েন বেশ বিপাকে। অনেকে ভোগান্তির সঙ্গে সোমবার পশু কুরবানি করেছেন। অনেকে অপেক্ষা করেছিলেন পানি কমার। কিন্তু আজ সকাল থেকে মহানগরে আরও পানি বাড়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.